শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে শুধু সমর্থনই নয়, সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের কথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ছাত্ররা যখন আন্দোলন শুরু করেছে সেই প্রথম দিন থেকেই আমরা বলছি যে তাদের আন্দোলন যুক্তিযুক্ত। আমরা তাদের সঙ্গে সহযোগিতা শুধু নয়, তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। আমরা এখনো আরও বেশি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, যে ছাত্রদের এই যৌক্তিক আন্দোলন এই আন্দোলনে আমাদের শুধু সমর্থন নয়, আমাদের সর্ব রকমের সহযোগিতা তাদের প্রতি থাকবে। গতকাল শনিবার বনানীতে দলের স্থায়ী কমিটির কারাবন্দি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় তার পরিবারের সাথে সাক্ষতের পর কোটা বিরোধী আন্দোলন সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাবে বিএনপি মহাসচিব এরকম মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ‘গণজাগরণ শুরু হয়ে গেছে, আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে’। তিনি বলেন, দেশে এখন একটা গণজাগরণ শুরু হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের কোটা বৈষম্য বিরোধী যে আন্দোলন সেই আন্দোলনে সাধারণ সমস্ত মানুষ যোগ দিয়েছে। শুধু ছাত্ররা নয়, এখন অভিভাবক, চিকিৎসক, আইনজীবী, শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিকসহ সব পেশার মানুষেরা, সব ধরনের মানুষেরা এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। তারা যুক্ত হয়েছেন সব ভয়কে উপেক্ষা করে, এটাই হচ্ছে, এবারকার আন্দোলনের সবচেয়ে বড় যে দিকটা যে মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছেন, জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি যে, এই আন্দোলন তার বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে। আমি বিশ্বাস করি ইনাশাল্লাহ জনগণের বিজয় অবশ্যই হবে, ছাত্র-শিক্ষার্থীদের বিজয় অবশ্যই হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা যেহেতু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সেজন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের যে দায়িত্ব-কর্তব্য সেই দায়িত্ব-কর্তব্য আমরা পালন করছি, আমরা করতে থাকবো। আমাদের সারাদেশে সমস্ত দেশের নেতা-কর্মীর প্রতি এই আহ্বান জানাতে চাই যে, ছাত্রদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যেটা সব সময় বলে আসছিলাম, তরুণদের জাগ্রত হবার কথা। সেই তরুণরাই এবার জেগে উঠেছে। এজন্যেই আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। আশাবাদী এই কারণে যে, তরুণরা যখন জেগে উঠে, ছাত্ররা যেখানে জেগে উঠে, যুবকরা যেখানে জেগে উঠে সেই আন্দোলনকে পরাজিত করা কারো পক্ষে সম্ভব না। আজকে ভয়াবহ যে দানবীয় ফ্যাসিস্ট সরকার তারা যেভাবে হত্যা করেছে আমাদের সন্তানদেরকে, সেটা অবর্ণনীয়, ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়, শত শত ছাত্রদেরকে তারা হত্যা করেছে। আমরা যখন আবার দেখতে পাই যে, তাদেরকে গণকবর দেয়া হয়েছে আমি যেটা দেখলাম পত্রিকায় ৫৯ জনকে গণকবর দেয়া হয়েছে, এটা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেও তো হারিয়ে যাচ্ছে, চিন্তাই করা যায় না এটা।
কারাগারে অমানবেতর অবস্থা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি এখানে এসেছিলাম আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাহেব বাসায় তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য। এর আগে আমি গিয়েছিলাম নজরুল ইসলাম খান সাহেবের বাসায় তার স্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য তার স্ত্রী অত্যন্ত অসুস্থ আপনারা জানেন সবই। মূলত আসার কারণটা হচ্ছে, আমরা যে তথ্য পাচ্ছি যে, কারাগারে শুধু তাদেরকে নয় সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিরা অমানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাদের সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই, তারা কোনো কিছু পাঠাতে পারছেন না, যোগাযোগই করতে পারছেন না। এটাকে আপনার টোটালি আইসোলেটেড বলা যায় আর কি।
তিনি বলেন, এটা কখনই গ্রহনযোগ্য না, এটা জেল কোডের বাইরেও বটে। তারা (বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য) অসুস্থ মানুষ, বয়স্ক মানুষ, নজরুল ইসলাম খান ভাই ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভাই অসুস্থ মানুষ, বড় বড় অসুখ আছে। তারা তাদের ঔষধপত্র ঠিকমতো পাঠাতে পারছেন না। এমনকি ইনসোলিন সেটাও সঠিকভাবে পাঠাতে পারছেন না। আমি আপানাদের মাধ্যমে জেল কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, এই অমানবিক কাজগুলো এইমুহুর্তে করবেন না, আপনারা অতীতে অনেক করেছেন এখন দয়া করে এই অমানবিক কাজগুলো করবেন না।
দুই নেতার পরিবারের সাথে সাক্ষাতের সময়ে বিএনপি মহাসচিবের সাথে ছিলেন দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ও মহাসচিবের একান্ত সহকারি ইউনুস আলী।

No comments:
Post a Comment