হাসিনার পদত্যাগের খবরে উল্লাসের মাঝেই বগুড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়েছে। তাণ্ডবে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সদর থানা, ফাঁড়ি, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং সদর উপজেলা পরিষদ ভবন এবং ইউএনও’র বাসভবন। একইসঙ্গে চলছে সুযোগ সন্ধানীদের লুটপাট। মঙ্গলবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলার থানা, ফাঁড়ি, তদন্ত কেন্দ্রগুলোর পুলিশ সদস্যদের ক্লোজ করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। থানা কিংবা ট্রাফিক বিভাগের সকল পুলিশ এখন ব্যারাকে। কোনো জরুরি প্রয়োজনে জেলা সদরের কোনো পুলিশের কাছে সেবা পাওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি পুলিশ সুপার কার্যালয়েও ঝুলছে তালা। এখানে কোনো পুলিশ সদস্য কিংবা কর্মকর্তা নেই বলে সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া বগুড়া সদরের সাতটি পুলিশ ফাঁড়ির সব পুলিশকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
শহর ঘুরে দেখা গেছে, জেলা পুলিশের দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম নেই। শহরের যানজট নিরসনে কাজ করছে শিক্ষার্থী এবং জনতার স্বেচ্ছাসেবী। শহরের সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা রেমি খাতুন জানান, এই মুহূর্তে দেশ খুব সংকটকাল পাড়ি দিচ্ছে।
এখন চারদিকে লুটপাটের গুজব শোনা যাচ্ছে। আন্দোলনকারীদের মাথায় কাঁঠাল রেখে দুষ্কৃতকারীরা অগ্নিসংযোগ করছেন। এটা ভয়াবহ। এসব দুষ্কৃতকারীদের কারণে বগুড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরে পুলিশের কার্যক্রম না থাকা শঙ্কার। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে দেখতে হবে। মিজানুর রহমান নামে আরেকজন বলেন, রাজাবাজার এলাকায় যাওয়ার পথে যানজটে পড়েছিলেন তিনি। আমি সাতমাথায় আসতে দেখি পুরো চত্বর রিকশা আর মোটরসাইকেল দিয়ে ভর্তি। একজন শিক্ষার্থী লাঠি হাতে যানজট ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সে একা আর কতোই পারবে? যদি এখনই প্রশিক্ষিত বাহিনী দায়িত্ব না নেয় তাহলে ক্রমাগত এই সংকট বাড়বে। রাজাবাজার এলাকার মুদি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, গতকাল দিবাগত রাত তিনটা পর্যন্ত আমি অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থেকে পালাক্রমে পাহারা দিয়েছি। নিজেদের দোকান, সম্পত্তি রক্ষায়। থানায় পুলিশ না থাকার সুযোগটি নিয়ে একশ্রেণির দুষ্কৃতকারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। জেলা পুলিশের একাধিক সোর্স বলছে, বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে শহরে অস্থিতিশীল অবস্থা ও সরকারি একাধিক স্থাপনার হামলার কারণে পুলিশ সদস্যরা এখন কোনো কার্যক্রমে নেই। ভাঙচুর, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগের ভয়ে রয়েছেন সবাই।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তারা জানান, গতকাল শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর থেকেই সরকারি স্থাপনা বিশেষ করে অগ্নিসংযোগের ভয় বাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাঝে। এই পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপি’র নেতাদের অনুরোধ করে পুলিশের স্থাপনা ও অফিস রক্ষা করার কথা জানানো হয়েছে। যতদূর জানি, তারা এগুলো পাহারা দিচ্ছেন। বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জানান, সদর থানায় দফায় দফায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ফাইলপত্র পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জেলা সদরের পুলিশ এখন নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। তবে জেলার আরও ১১টা উপজেলার পুলিশ নিজ নিজ কর্মস্থলে রয়েছেন।

No comments:
Post a Comment