ইসরায়েল বলছে, সন্ত্রাসী ধরতে গিয়ে গুলির মুখে পড়ার পর হামলা চালানো হয়েছে। আর বেইত জিন গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, তাদের ওপর প্রথম হামলা হওয়ার পর তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেন।
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এক গ্রামে ইসরায়েলি অভিযানে ১৩ জনের নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
দামেস্ক এ অভিযানকে ‘অপরাধমূলক হামলা’ আখ্যা দিয়েছে। তবে ইসরায়েল বলছে, সন্ত্রাসী ধরতে এক অভিযান চলাকালে তাদের সেনারাই গুলির মুখে পড়েছিল।
‘সন্ত্রাসীদের গুলিতে’ তাদের ছয় সেনা আহত হয়েছে, এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর, দাবি তাদের।
বছরখানেক আগে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সিরিয়ায় ইসরায়েলের অভিযান ও তাতে প্রাণহানির সংখ্যা যে বাড়ছে, বেইত জিনে নিহতের সংখ্যা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আসাদ ক্ষমতায় থাকাকালে ইসরায়েল নিয়মিত দেশটিতে বোমা হামলা চালালেও তাকে উৎখাতের পর প্রতিবেশী দেশটিতে সামরিক অভিযানের ধার বাড়িয়েছে।
তেল আবিব বলেছে, তারা জঙ্গিদের তাদের সীমান্ত থেকে দূরে রাখতেই এসব অভিযান চালাচ্ছে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, জামা’আ ইসলামিয়ার সন্দেহভাজন সদস্যদের ধরতেই তাদের সেনারা সিরিয়ায় অভিযানে গিয়েছিল। লেবাননের এই সুন্নি গোষ্ঠীটি গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলকে নিশানা বানিয়ে একাধিকবার রকেট ছুড়েছে।
গোষ্ঠীটি ‘সন্ত্রাসী হামলার ছক কষছে’ বলে অভিযোগ ইসরায়েলের।
তাৎক্ষণিকভাবে রয়টার্স জামা’আ ইসলামিয়ার কর্মকর্তাদের মন্তব্য পায়নি।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা চজানিয়েছে, রাত ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে ইসরায়েলি বাহিনী বেইত জিনে গোলা ছুড়ে এবং এরপর ইসরায়েলি সেনারা গ্রামটিতে ঢুকে পড়ে।
বাসিন্দারা প্রতিরোধ গড়ে তুললে বাধে ‘সহিংস সংঘাত’, বলেছে তারা।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা’ তাদের সেনাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল, এর প্রতিক্রিয়ায় তারাও গুলি চালায়, সঙ্গে ‘আকাশপথে সাহায্যও ছিল’।
“বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে নির্মূল করা হয়েছে,” বলেছে তারা।
ইসরায়েলি হামলায় নারী ও শিশুও নিহত হয়েছে, স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে এবং লোকজনকে বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে পালাতে হয়েছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েল ‘পুরোদস্তুর যুদ্ধাপরাধ’ করেছে আখ্যা দিয়ে এ ধরনের হামলা অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাতে হুমকিতে ফেলবে বলে সতর্কও করেছে তারা।
বেইত জিনের স্থানীয় কর্মকর্তা ওয়ালিদ আকাশা বলছেন, তাদের গ্রামে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অস্তিত্বই নেই।
“আমরা শান্তিপূর্ণ, বেসামরিক লোকজন, কৃষক। নিজেদের রক্ষার বৈধ অধিকার রয়েছে আমাদের। আমরা তাদের ওপর প্রথম হামলা চালাইনি, তারা আমাদের ভূখণ্ডে এসে হামলা চালিয়েছে,” ফোনে রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন তিনি।
আকাশা জানান, এর আগে জুনে তাদের গ্রাম থেকে ৭ জনকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী, এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ জানেন না তারা।
অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, ১২ জুনের ওই অভিযানে তারা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছিল এবং পরে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে ইসরায়েলে পাঠানো হয়েছে।
ইসরায়েলের অভিযোগ অস্বীকার করে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেসময় বলেছিল, ইসরায়েলি সেনারা যাদের ধরেছে তারা সবাই বেসামরিক।
জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক সহকারী বিশেষ দূত নাজাত রোচদি ইসরায়েলি অভিযানকে ‘সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার গুরুতর ও অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন’ অভিহিত করেছে, যা ‘এমনিতেই ভঙ্গুর পরিবেশকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে’।
No comments:
Post a Comment