রাশিয়ার প্রতিনিয়ত চাপের মুখে থাকা ইউক্রেনের আর্থিক সংকট মেটাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুটি বিকল্প প্রস্তাব করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউরোপে জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদের মুনাফা এবং যৌথ ঋণের সমন্বয়ে কিয়েভকে ৯ হাজার কোটি ইউরো বা ১০ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার (৩ ডিসেম্বর) প্রস্তাবিত এই তহবিলের বিষয়টি ব্রাসেলসে উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবটি ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন।
তিনি বলেন, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ রক্ষা করার এবং যতটা সম্ভব ঝুঁকি কমানোর জন্য শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন সময়ে ইউক্রেন এখন একটি ‘সন্ধিক্ষণে’ দাঁড়িয়ে আছে। দেশটিতে একদিকে শান্তি আলোচনা চলছে, অন্যদিকে রাশিয়া তাদের হামলা আরও জোরদার করছে।
তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী দুই বছরে অত্যাবশ্যকীয় রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম ও প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে ইউক্রেনের ১৩ হাজার ৫০০ কোটি ইউরো প্রয়োজন হবে।
ভন ডার লিয়েন জানান, এই অর্থের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৯ হাজার কোটি ইউরো দিতে প্রস্তুত ইইউ। বাকি অর্থ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এই প্রস্তাবের অধীনে কমিশন সদস্য দেশগুলোর জন্য দুটি অর্থায়ন পদ্ধতি তুলে ধরেছে। প্রথমত, ইইউ বাজেটের জামানত রেখে পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করবে এবং তা ইউক্রেনকে ঋণ হিসেবে দেবে। এই পদ্ধতির জন্য ইইউর সব সদস্য দেশের সর্বসম্মত অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
দ্বিতীয়ত, ইইউর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জব্দ থাকা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদের মুনাফার বিপরীতে ঋণ নেবে কমিশন। এরপর এই অর্থ ‘ক্ষতিপূরণ ঋণ’ হিসেবে ইউক্রেনে স্থানান্তর করা হবে। কিয়েভকে এই ঋণ তখনই শোধ করতে হবে, যখন রাশিয়া যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দেবে। এই পদ্ধতি যোগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে গৃহীত হতে পারে।
ভন ডার লিয়েন জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়ার সম্ভাব্য প্রতিশোধ বা তৃতীয় কোনো দেশে বেআইনি পদক্ষেপ থেকে ইইউভুক্ত দেশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষায় প্যাকেজটিতে ব্যাপক সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিশেষ করে বেলজিয়ামের সুরক্ষার জন্য একটি ‘সংহতি ব্যবস্থা’ রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে ইইউ সম্মিলিতভাবে যেকোনো অবশিষ্ট ঝুঁকি গ্রহণ করবে। উল্লেখ্য, বেলজিয়ামেই ইউরোক্লিয়ার অবস্থিত, যেখানে ইইউতে জব্দ করা রুশ সম্পদের বড় অংশ রয়েছে।
বেলজিয়াম সরকার আশঙ্কা করছে, তারা আইনি জটিলতায় পড়তে পারে এবং একা আর্থিক দায়ভার বহন করতে হতে পারে। তাই তারা জোর দিয়ে বলছে, এই প্রস্তাবের আর্থিক ও আইনি ঝুঁকি সব ইইউ সদস্য দেশকে ভাগ করে নিতে হবে।
ভন ডার লিয়েন বলেন, ‘রাশিয়ার প্রতি বার্তা হলো, ক্ষতিপূরণ ঋণ তাদের আগ্রাসী যুদ্ধের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সুতরাং এটি শেষ পর্যন্ত শান্তি খুঁজে পেতে আলোচনার টেবিলে আসার একটি আমন্ত্রণ।’
কমিশন দ্রুত অগ্রগতির আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ১৮-১৯ ডিসেম্বরের ইউরোপীয় কাউন্সিলের সম্মেলনে ইইউ নেতাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি আসা উচিত। আগামী কয়েক মাস আর্থিক সংকটে ভুহতে পারে ইউক্রেন। এসময়ে সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সময় খুব বেশি নয়।
ক্রেমলিন গতকাল বলেছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মার্কিন দূতদের সাথে ‘খুব কার্যকর’ আলোচনা করেছেন, যদিও পক্ষগুলি শান্তি পরিকল্পনায় একমত হতে ব্যর্থ হয়েছে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ।
No comments:
Post a Comment