ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আমিনবাজারে বর্জ্যাগার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পটি আবারও ঝুলে গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন ইনসিনারেশন (ভস্মীকরণ) প্ল্যান্ট স্থাপনে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাইট ক্লিয়ারেন্স পেয়েছে। কিন্তু তাপমাত্রা নিয়ে জটিলতার কারণে এখনো পরিবেশগত চূড়ান্ত ছাড়পত্র পায়নি। ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিবেশ ছাড়পত্র না পাওয়ায় তারা কাজ শুরু করতে পারছেন না। অথচ এ ডিসেম্বরেই এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় এ প্রকল্পের মেয়াদ আবার বৃদ্ধি করতে হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।
ডিএনসিসি ২০২০ সালে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পটি হাতে নেয়। এরই মধ্যে দুই দফায় দ্বিগুণ দাম বাড়িয়েও এখনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি।
ডিএনসিসির বর্জ্যব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এস এম শফিকুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চীনা একটি প্রতিষ্ঠান আমিনবাজারের বর্জ্যাগার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পটির কাজ শুরু করেছিল। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রথমে সাইট ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছিল। তবে চূড়ান্ত ছাড়পত্র এখনো আসেনি। এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আছে। এটি এলেই অবশিষ্ট কাজ শুরু করতে পারব। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় ২০২০ সালের প্রথমদিকে সাভারের আমিনবাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন পায়। সে সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৭৮৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। মেয়াদকাল ২০২৩ সালে জুন পর্যন্ত ধরা হলেও পরে তা বাড়ানো হয়। দুই দফায় ব্যয় বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। এরই মধ্যে প্রকল্প মেয়াদ শেষ হয়ে এলেও উৎপাদনের কাজ শুরু করা যায়নি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের অক্টোবরে।
প্রকল্পের আওতায় ৮০ একক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আর ৩০ একর জায়গায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্লান্ট স্থাপন করা হবে। অবশিষ্ট ৫০ একরে মেডিকেল ও ই-বর্জ্যের জন্য ল্যান্ডফিল করা হবে। প্রকল্পের আওতায় তিনটি হাইড্রোলিক এক্সকাভেটর, ছয়টি চেইন ডোজার, দুটি লং আর্ম এক্সকাভেটর কেনা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ ছাড়পত্র না পাওয়ায় প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটির বর্জ্য পোড়াতে সিএমইসির সঙ্গে করা চুক্তিতে তাপমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৮০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। অথচ ২০২১ সালের বর্জ্যব্যবস্থাপনা নীতিমালায় এটি ছিল ১ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তাপমাত্রার এ তারতাম্যের কারণেই প্রকল্পের কাজ বন্ধ আছে। এ ব্যাপারে সমাধানে পৌঁছানো গেলেই আগামী দুই বছরের মধ্যে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিবেশগত ছাড়পত্র) মাসুদ ইকবাল মো. শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাধারণত দুই ভাগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর একটি হচ্ছে সাইট ক্লিয়ারেন্স। আরেকটি পরিবেশগত ছাড়পত্র। আমিনবাজার সাইট ক্লিয়ারেন্স ছাড়পত্র দেওয়া আছে।
কিন্তু পরিবেশগত ছাড়পত্রটি এখনো দেওয়া হয়নি। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী যে ইনসিনারেশন প্ল্যান্ট স্থাপন করবে তার তাপমাত্রা নিয়ে জটিলতা আছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা যে তাপমাত্রায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালাবে তার মাত্রা বর্জ্যব্যবস্থাপনা নীতিমালার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম। এ জটিলতার কারণে এখনো পরিবেশ ছাড়পত্র মেলেনি এবং প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে সমস্যার সমাধান হলে আর কোনো জটিলতা থাকবে না। ডিএনসিসি কর্র্তৃৃপক্ষ বর্জ্য পোড়ানোর তাপমাত্রা কমানোর জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। যেহেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা এ ইনসিনারেশন প্ল্যান্টটি পরিবেশ সংশ্লিষ্ট নীতিমালায় উল্লিখিত তাপমাত্রা বজায় রেখে নির্মাণ করা হয়নি, এজন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কাজ এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।
No comments:
Post a Comment