বোলিংয়েই কাজ অনেকটা সেরে রেখেছিলেন স্বাগতিক বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান, রিশাদ হোসেনরা। মামুলি লক্ষ্যে নেমে পঞ্চাশ রানের ভেতর দুই উইকেট হারালেও তানজিদ হাসান তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমনের ব্যাটের কাছে পাত্তা পায়নি সফরকারী আয়ারল্যান্ড। অনায়াস জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার তৃতীয় ও শেষ টি২০তে বাংলাদেশ জিতেছে ৮ উইকেটের বড় ব্যাবধানে। মাত্র ১১৮ রানের লক্ষ্য স্বাগতিক দল পেরিয়েছে ম্যাচের ৩৮ বল আগে। ৩৪ বলে ফিফটি করা তানজিদ হাসান তামিম অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৫৫ রানে, ২৬ বলে ৩৩ করেন পারভেজ হোসেন ইমন। আর এই জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে লিটন কুমার দাসের দল।
যদিও রান তাড়ায় তানজিদের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠানো হয় সাইফ হাসানকে। এই সিরিজে রান না পাওয়া সাইফ ওপেন করতে নেমেও আলো ছড়াতে পারেননি। ১ ছয়, ২ চারে ঝলকের আভাস দিয়েও থেমে যান ১৯ রানে। ক্রেইগ ইয়ংয়ের বলে তার বিদায়ের পর ক্রিজে এসেই বাউন্ডারি পাওয়া লিটন দাস আউট হন ছক্কা মারার চেষ্টায়। হ্যারি টেক্টরের বলে সহজেই ধরা দেন স্কয়ার লেগে, করেন ৬ বলে ৭ রান।
৪৬ রানে দুই উইকেট হারালেও দলের উপর চাপের কিছু ছিলো না। এমনিতে নিয়মিত দুই ওপেনার তানজিদ ও পারভেজ জুটি বাঁধেন তৃতীয় উইকেটে, অনায়াসে রান আনতে থাকেন তারা। চোখের পলকে লক্ষ্যের দিকে এগুতে থাকে দল। ৫০ বলে ৭৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে কাজ সেরে ফেলেন তারা। আয়ারল্যান্ডের ইনিংস শেষেই ম্যাচের ভাগ্য ঠিক হয়ে গিয়েছিল। নামে অঘোষিত ফাইনাল হলেও ফল একপেশে হতে যাচ্ছে। ম্যাচ শেষে তাই হলো। চট্টগ্রামে ৩৮ বল হাতে রেখে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
এতে করে সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতি নিয়েই টি২০ বিশ্বকাপে খেরতে যাবে বাংলাদেশ দল। কেননা আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভারত-শ্রীলংকায় শুরু হতে যাওয়া সংক্ষিপ্ত সংস্করণের বিশ্বকাপের আগে আর কোনো আন্তর্জাতিক সিরিজ নেই লিটন কুমার দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তদের দল বাংলাদেশ।
চতুর্থ ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার সময় ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৯ রান করেন আগের দুই ইনিংসে চারে নামা সাইফ। অন্যদিকে সর্বশেষ ম্যাচে ফিফটি করে ম্যাচসেরা লিটন কুমার দাস মঙ্গলবার দেখেছেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। ৫৭ রানের বিপরীতে মঙ্গবৈার ৭ রানে আউট হয়েছেন। তবে দলের অধিনায়ক লিটন দ্রুত আউট হলেও বাংলাদেশ সহজ জয়ই পেয়েছে।
জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন তানজিদ তামিম। প্রথম দুই ইনিংসে দুই অংকের ঘর স্পর্শ করতে না পারা ওপেনার আজ করেছেন ফিফটি। ক্যারিয়ারের ১১তম ফিফটির ইনিংসটি খেলেছেন ৫৫ রানের। ৩৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করেছেন বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে। ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৩ ছক্কার বিপরীতে ৪ চারে।
অন্যদিকে চারে নেমে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন পারভেজ হোসেন ইমন। আগের দুই ম্যাচে ওপেন খেলা ইমন ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৩ ছক্কা ও ১ চারে। বাংলাদেশের জয়ের কাজটা সহজ করে দিয়েছেন বোলাররা। বিশেষ করে রিশাদ হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমান। দুজনে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন। তাদের তোপে ১১৭ রানে অলআউট হয়েছে আয়ারল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেছেন ম্যাচে একবার জীবন পাওয়া অধিনায়ক পল স্টার্লিং।
তিনে নেমে বাজে এক ডেলিভারিতে উইকেট বিলিয়ে ফেরেন অধিনায়ক লিটনও। তবে দলকে কোনো চাপে পড়তে হয়নি। আইরিশদের আলগা বোলিং কাজে লাগিয়ে অনায়াসেই দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন তানজিদ ও পারভেজ হোসেন ইমন। জন্মদিনের পরদিন ফিফটি করে কেক কাটার মতো করে উদযাপন করেন তানজিদ। ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় ৩৬ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৩ ছক্কায় ২৬ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত রয়ে যান পারভেজ।
আর এই সিরিজ দিয়ে টি২০তে সফলতম বছর শেষ হলো বাংলাদেশের। ৩০ ম্যাচ খেলে এ বছর ১৫টি ম্যাচ জিতেছে তারা। এই সংস্করণে লিটনদের পরের ম্যাচ আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড: ১৯.৫ ওভারে ১১৭ (স্টার্লিং ৩৮, টিম টেক্টর ১৭, হ্যারি টেক্টর ৫, টাকার ১, ক্যাম্ফার ৯, ডকরেল ১৯, ডেল্যানি ১০, অ্যাডায়ার ৮, হামফ্রিজ ১, ইয়াং ২*, হোয়াইট ৫; শেখ মেহেদি ১/২৪, শরিফুল ২/২১, সাইফ উদ্দিন ১/৩১, মুমÍাফিজ ৩/১১, রিশাদ ৩/২১, সাইফ হাসান ০/৮)।
বাংলাদেশ: ১৩.৪ ওভারে ১১৯/২ (তানজিদ ৫৫*, সাইফ ১৯, লিটন ৭, পারভেজ ৩৩*; হামফ্রিজ ০/১৫, অ্যাডায়ার ০/১১, ইয়াং ১/৩০, ডেল্যানি ০/২৫, টেক্টর ১/১৭, হোয়াইট ১/২১)।
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: তানজিদ হাসান।
ম্যান অব দা সিরিজ: শেখ মেহেদি হাসান।
সূত্র: যায়যায়দিন
No comments:
Post a Comment