বর্তমান ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সামাজিক মাধ্যমে নিজের তথ্য প্রকাশ করা কিংবা অসতর্কভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করা অনেক সময় সাইবার অপরাধীদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারক চক্রও নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো ভিশিং। এ প্রতারণা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক সমকাল।
ভিশিং শব্দটি এসেছে ভয়েস এবং ফিশিং থেকে। ফিশিং হলো ভুয়া ইমেইল বা মেসেজ পাঠিয়ে গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল। আর যখন এই কাজ ফোনকলের মাধ্যমে করা হয়, তখন তাকে বলা হয় ভিশিং। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে এই কৌশল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতারকরা ব্যাংক কর্মকর্তা বা কোনো পরিচিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সেজে ফোন করে গ্রাহকের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করার চেষ্টা করে।
ব্যাংক সংক্রান্ত প্রতারণা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। অনেক সময় প্রতারকরা নতুন ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার নাম করে ফোন করে অ্যাকাউন্টের তথ্য জানতে চায়। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহককে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। ফোনে পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কোনো তথ্য দেওয়া উচিত নয়। বরং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অফিসিয়াল নম্বরে ফোন করে সত্যতা যাচাই করতে হবে। সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে কল কেটে দেওয়া উচিত। ব্যাংক কখনো ফোনে বা মেসেজে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট তথ্য চায় না।
ডিজিটাল কার্ড প্রতারণার ক্ষেত্রেও একই কৌশল ব্যবহার করা হয়। প্রতারকরা বলে, তথ্য না দিলে অ্যাকাউন্ট বা কার্ড তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া কল। অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য নিয়ে ভুয়া ফোনকলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া বিমানের টিকিটে ছাড়, হোটেল বা রেস্তোরাঁয় বিশেষ অফার কিংবা পণ্য ক্রয়ে সাশ্রয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়।
ই-কমার্স প্রতারণাও বাড়ছে। প্রতারকরা অ্যামাজন, মাইক্রোসফট বা গুগলের নাম ব্যবহার করে কারিগরি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারা ইমেইল বা কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড চাইতে পারে। এসব ক্ষেত্রে কোনো তথ্য দেওয়া উচিত নয়। অনেক সময় তারা বিশেষ অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলে, যা আসলে র্যানসমওয়্যার ছড়িয়ে দেওয়ার ফাঁদ। এতে গ্যাজেট হ্যাক হয়ে যায় এবং ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়।
সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প বা স্বাস্থ্যসেবার নাম করে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর চাওয়ার ঘটনাও ঘটে। জাতীয় পরিচয়পত্রের অপব্যবহার ইতিমধ্যে বহুবার শনাক্ত হয়েছে। তাই এসব তথ্য কখনোই ফোনে বা অনলাইনে অচেনা ব্যক্তিকে দেওয়া উচিত নয়।
ছদ্মবেশী পরিষেবার মাধ্যমে প্রতারণাও সাধারণ হয়ে উঠেছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল, ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন বা অন্যান্য ডিজিটাল বিল পরিষেবায় ছাড়ের কথা বলে প্রতারকরা ম্যালিশিয়াস লিঙ্ক পাঠায়। এসব লিঙ্কে ক্লিক করলে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হতে হয়।
ভিশিং এখন সাইবার অপরাধের অন্যতম বড় কৌশল। প্রতারকরা মানুষের ব্যস্ততা ও অসতর্কতাকে কাজে লাগিয়ে তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। তাই সচেতনতা সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। কোনো সন্দেহজনক ফোনকল বা মেসেজ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে এবং প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে হবে।
No comments:
Post a Comment