| থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে তুমুল বর্ষণের পর বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে নৌকা চালিয়ে যাচ্ছে দুই কিশোর। ছবি: রয়টার্স |
মুষলধারে বৃষ্টিতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার তিন দেশে হওয়া বন্যা ও ভূমিধসে মৃত্যু ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ঘরবাড়িছাড়া লাখ লাখ মানুষের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে দেশগুলোর জরুরি পরিষেবার কর্মীদের হিমশিমও খেতে হচ্ছে।
মালাক্কা প্রণালীতে বিরল এক ঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর সপ্তাহখানেক ধরে প্রবল বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হয়েছে। এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় ৪৩৫, থাইল্যান্ডে ১৭০ আর মালয়েশিয়ায় তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও রোববার পর্যন্ত দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ তিনটির উদ্ধারকর্মীরা বন্যা আক্রান্ত অনেক জায়গায় এখনও পৌঁছাতেই পারেননি। বন্যার কারণে দক্ষিণ থাইল্যান্ডের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এবং ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ১১ লাখ বাসিন্দা চরম বিপাকেও পড়েছে, বলছে দেশদুটির সরকারের তথ্য।
ইন্দোনেশিয়ায় ত্রাণ ও উদ্ধারকারী দলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের কাছে জরুরি সহায়তা পৌঁছাতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে, কারণ পশ্চিমের সুমাত্রা দ্বীপে যাওয়ার রাস্তাগুলো বন্ধ। বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে সুমাত্রার তিনটি দ্বীপের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পশ্চিম সুমাত্রার বিচ্ছিন্ন শহর পালেমবায়ানের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে রয়টার্সের এক আলোকচিত্রী বিশাল এলাকা ও অসংখ্য বাড়িঘরকে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকতে দেখেছেন। হেলিকপ্টারটি যখন যে খেলার মাঠে নামে তার কাছেই খাবারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল কয়েক ডজন মানুষ।
অনেক এলাকায় ত্রাণ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠা লোকজন লুটপাটও করছে বলে খবর পাওয়া গেছে, শনিবার বলেছেন কর্মকর্তারা।
“পানি হঠাৎ ঘরে উঠে এলো, আমরা ভয় পেয়ে পালালাম। শুক্রবার ফিরে এসে দেখি ঘরই নেই, ধ্বংস হয়ে গেছে,” পশ্চিম সুমাত্রার পাদাং শহরে রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন ৪১ বছর বয়সী আফ্রিয়ানতি।
ঘরের যে একচিলতে দেয়াল টিকে আছে তার পাশে একটি তাঁবু টানিয়ে এখন সেখানেই পরিবারের ৯ সদস্যের সঙ্গে থাকছেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়ার সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এখনও ২৮৯ জন নিখোঁজ, বাড়িঘর ছেড়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার মানুষ।
থাইল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যায় দক্ষিণ থাইল্যান্ডে ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত ১০২ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে সংখলা প্রদেশে, ১৩১ জন।
প্রদেশটির সবচেয়ে বড় শহর হাত ইয়াইয়ে একদিনেই ৩৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে, যা ৩০০ বছরে সর্বোচ্চ। অন্যান্য দিনগুলোতেও শহরটি মুষলধারে বৃষ্টি দেখেছে।
পার্শ্ববর্তী মালয়েশিয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এখনও প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ মানুষ আছে বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। শনিবার আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঝড় ও টানা বৃষ্টি সংক্রান্ত সতর্কতা তুলে নিয়েছে। দেশের বেশিরভাগ অংশের আকাশ পরিষ্কার থাকবে বলেও পূর্বাভাসে বলেছে তারা।
গত সপ্তাহে দেশটির অনেক অংশ ভারি বৃষ্টি ও বাতাসের তাণ্ডব দেখেছে। থাইল্যান্ডে আটকা পড়া ৬ হাজার ২০০-র বেশি মালয়েশীয়কে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রোববার মন্ত্রণালয়টি ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রায় থাকা নাগরিকদের জন্য নির্দেশনা জারি করে সহায়তা পেতে তাদেরকে স্থানীয় কনসুলেটে নিবন্ধন করতে বলেছে। ওই এলাকায় এক ভূমিধসে ৩০ বছর বছর বয়সী এক মালয়েশীয় নিখোঁজ বলেও খবর পেয়েছে তারা।
No comments:
Post a Comment