| ক্যারিবীয় উপকূলে মোতায়েন ভেনেজুয়েলার কোস্ট গার্ডের নৌকা। ফাইল ছবি। ছবি: রয়টার্স |
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, ভেনেজুয়েলা ও এর আশপাশের আকাশসীমা ‘পুরোপুরি বন্ধ’ বলেই ধরে নেওয়া উচিত।
এ সম্বন্ধে বিস্তারিত না বললেও শনিবার এমন এক সময়ে তার এ মন্তব্য এসেছে, যখন ওয়াশিংটন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ ক্রমাগত বাড়িয়েই চলছে।
ট্রাম্প এর আগে বারবারই ক্যারিবীয় ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে কথিত মাদকবাহী নৌযানের ওপর হামলা চালানোর কথা জানিয়েছেন। এসব হামলা এরই মধ্যে ৮০ জনের প্রাণও কেড়ে নিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ওই নৌযানগুলোতে মাদক থাকার কোনো প্রমাণ হাজির করেনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলা শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে স্থল হামলায় গড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ উত্তেজনার মধ্যেই দিনকয়েক আগে ট্রাম্পের সঙ্গে মাদুরোর ফোনালাপ এবং সামনেই ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্র সফরে যেতে পারেন বলে খবরও ছড়িয়েছে।
ভেনেজুয়েলার সামরিক সক্ষমতা কেমন?
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতার সঙ্গে ভেনেজুয়েলার তুলনা হলে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিকে ‘লিলিপুট’-ই বলতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণে ঘাটতি, কম বেতন ও পুরনো সরঞ্জাম ওয়াশিংটনের কাছে পাত্তাই পাবে না, বলছে ভেনেজুয়েলার সামরিক সক্ষমতা বিষয়ে অবগত ছয়টি সূত্র।
২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা মাদুরো সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সরকারি বিভিন্ন পদে বসিয়ে তাদের আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারলেও সাধারণ সেনারা মাসে স্থানীয় মুদ্রায় যা আয় করেন তা ১০০ মার্কিন ডলারের মতো হবে; দেশটিতে গড়পড়তা পরিবারগুলোর দৈনন্দিন খরচ মেটাতে মাসে এখন এর পাঁচগুণ লাগে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।
ভেনেজুয়েলায় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বিরল নয়। আর যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে এই প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, বলছে একাধিক সূত্র।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভেনেজুয়েলার বাহিনীগুলোর মূল অভিজ্ঞতা হল সড়কে বিক্ষোভরত নিরস্ত্র বেসামরিকদের সঙ্গে সংঘাত।
মাদুরো বলেছেন, ৮০ লাখ সাধারণ মানুষ আধাসামরিক বাহিনীগুলোতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। যদিও একটি সূত্রের অনুমান, কয়েক হাজার গোয়েন্দা কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র সমর্থক আর কিছু মিলিশিয়া সদস্যই মূলত প্রতিরক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।
দেশটির সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামেও ঘাটতি আছে। এখন তাদের কাছে যা আছে তার বেশিরভাগই রাশিয়ার বানানো এবং কয়েক দশকের পুরনো। ২০০০- এর দশকে কারাকাস ২০টির মতো সুখোই যুদ্ধবিমান কিনলেও যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমানকে মোকাবেলায় সেগুলো পর্যাপ্ত নয়।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির কাছে রাশিয়ার বানানো যেসব হেলিকপ্টার, ট্যাংক ও ক্ষেপণাস্ত্র আছে সেগুলোও বেশ সেকেলে।
তাহলে ভেনেজুয়েলা কীভাবে হামলার মোকাবেলা করবে?
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বা স্থল হামলার ক্ষেত্রে ভেনেজুয়েলা গেরিলা কায়দায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা হাতে নিতে পারে বলে একাধিক সূত্র এবং রয়টার্সের দেখা পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথি বলছে।
এই প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি ভেনেজুয়েলার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই বলেছেন, তাদের ভাষায় এটি হবে ‘দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ’। তবে এ সম্বন্ধে এর বেশি কিছু বলেননি তারা।
তাদের এই ‘দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধে’ ২৮০টির বেশি স্থানে ছোট ছোট সামরিক ইউনিট নাশকতাসহ বিভিন্ন গেরিলা কৌশলে মার্কিন বাহিনীকে পর্যদুস্ত করার চেষ্টা করতে পারে।
ভেনেজুয়েলার কাছে রাশিয়ার বানানো ৫ হাজার ইগলা ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র এরই মধ্যে মোতায়েনও করা হয়েছে। মাদুরো সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর প্রশংসাও করেছেন।
হামলা হলে বিভিন্ন ইউনিটকে ছড়িয়ে পড়তে ও বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে পড়তে সামরিক নির্দেশনাও দেওয়া আছে, বলেছে একটি সূত্র।
দ্বিতীয় কৌশলটি হল ‘অরাজকতা সৃষ্টি’, ভেনেজুয়েলার কর্মকর্তারা অবশ্য এই কৌশলের কথা স্বীকারই করছেন না। এই কৌশলের সাহায্যে তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র সমর্থকদের কাজে লাগিয়ে কারাকাস ও অন্যত্র এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে যে ভেনেজুয়েলাকে কোনোভাবে শাসনই করা যাবে না, বলছে সূত্রগুলো।
ভেনেজুয়েলায় আর কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে?
ভেনেজুয়েলার পশ্চিমে আছে কলম্বিয়ার বিভিন্ন গেরিলা দল। ওই এলাকাটি কোকা চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হাবও। কোকা কোকেইনের মূল উপাদান।
মাদুরোর দলের সমর্থকরা পরিচিত ‘কালেক্টিভোস’ বা ‘কালেক্টিভস’ নামে। এদের প্রায়ই মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়াতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে তাদের কাছে অস্ত্রও থাকে।
ভেনেজুয়েলার সরকারবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠী, এনজিও, ওয়াশিংটন এবং লাতিন আমেরিকার কিছু দেশ মাদুরো ও ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মাদক চোরাকারবারিদের যোগসাজশ আছে বলে অভিযোগ করে আসছে। ওই মাদকচক্রগুলো নানান সহিংসতায় জড়িত বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
ভেনেজুয়েলার সরকার ধারাবাহিকভাবে তাদের সঙ্গে মাদক চোরাকারবারিদের যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা বলছে, ভেনেজুয়েলার তেলের বিশাল রিজার্ভের দিকে নজর পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এই তেলের নিয়ন্ত্রণ নিতেই ওয়াশিংটন ভেনেজুয়েলায় সরকার উৎখাত করে পাপেট কাউকে বসাতে চায়।
No comments:
Post a Comment