জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এর দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল ২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সোশ্যাল মিডিয়ার বর্তমান ভূমিকা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, বিশ্বজুড়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আজ এক ধরনের নতুন সংকটের ক্ষেত্র হিসেবে দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশও সেই চাপে রয়েছে।
ফখরুলের মতে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে কোনো দায়বদ্ধতা না থাকায় সেখানে যেকোনো ব্যক্তি ইচ্ছেমতো মন্তব্য বা অভিযোগ ছড়িয়ে দিতে পারছেন। এর ফলেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সামাজিকভাবে পরিচিত মানুষ কিংবা ব্যবসায়ীরা নিয়মিত নেতিবাচক প্রচারণার শিকার হচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এসব প্রচারণার উদ্দেশ্য অনেক সময়ই নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে হেয় করা বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য যাচাই-বাছাই না থাকায় একদিকে যেমন গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি কিছু সংগঠিত গোষ্ঠী এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ডিজিটাল মব তৈরি করছে। এর ফলে সামাজিক উৎকণ্ঠা বাড়ছে এবং দেশের সামগ্রিক গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনভাবে অপপ্রচার ছড়ানো হয় যে মনে হয় পুরো সমাজকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যেকোনো মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে টার্গেট করা হচ্ছে। এটি শুধু ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্র, সমাজ ও গণতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি।
আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচন উপলক্ষে বক্তৃতার এক পর্যায়ে ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র মানেই চিন্তা ও মতামতের স্বাধীনতা। ভিন্নমতকে শত্রু হিসেবে দেখা হলে গণতন্ত্র কখনোই শক্তিশালী হয় না। তিনি বলেন, আমি আপনার মতের সঙ্গে একমত নাও হতে পারি। কিন্তু আপনাকে মত প্রকাশ করতে বাধা দেওয়া আমার কোনো অধিকার নেই। আজ আমাদের দেশে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভিন্নমত পোষণ করলেই তাকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং নানা ধরনের অপপ্রচারের মুখে পড়তে হয়।
মির্জা ফখরুল অনুষ্ঠানে বিএনপির অতীত ভূমিকারও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিএনপি দেশব্যাপী একটি প্রমাণিত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি, যারা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসনের সময় বাংলা গণমাধ্যম প্রায় স্তব্ধ ছিল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং বন্ধ থাকা পত্রিকাগুলো পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীকালে খালেদা জিয়াও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাদারিত্বকে শক্তিশালী করতে বহু উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
তিনি আরও জানান, বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা পুনর্গঠনের রূপরেখায় গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এটি শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, এটি দীর্ঘদিনের ও পরীক্ষিত অঙ্গীকার।
ফখরুল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। দাবি-দাওয়া, কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা বিষয়গুলো নিয়ে মালিকপক্ষ এবং সরকারের সঙ্গে প্রয়োজনীয়ভাবে কথা বলতে হবে। তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভর করে সাংবাদিকদের পেশাগত অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সাংবাদিকদের শক্তি হলো তাদের সত্য এবং ঐক্য। গত ১৫ বছরে গণমাধ্যমকে পরিকল্পিতভাবে দুর্বল করা হয়েছে। এখনই সাংবাদিকদের এক হতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন। প্রধান অতিথি ছাড়াও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার এবং ডিএসইউর সভাপতি শহিদুল ইসলাম।
সব বক্তাই সাংবাদিকদের অধিকার, স্বাধীনতা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment